ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়া অর্থ বা টাকা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করার জগতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি এবং এটি অভিজ্ঞ ও এক্সপার্ট ব্যবসায়ীদের এবং নতুনদের উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে৷ এই অস্থিরতা ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের তীব্র ওঠানামাকে বোঝায়, যাকিনা বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের জন্যে সুযোগগুলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলো উভয়েই তৈরি করে থাকে। এই ঘটনার কারণগুলো বা ফ্যাক্টরগুলো এবং বাজার এবং ব্যবহারকারীদের বা ইউজারদের জন্যে এর পরিণতিটাও বোঝা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

একটি উদাহরণ হিসাবে বিটকয়েনকে ব্যবহার করে অস্থিরতাকে বোঝার চেষ্টা করি।

বিটকয়েন, এটি প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেটি আর্থিক বা ফাইন্যান্সিয়াল বাজারের মধ্যে অস্থিরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এর দাম একদিনের মধ্যে শতকরা দশ ভাগের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে, যাকিনা বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের ভয় দেখায় এবং ব্যবসায়ীদেরও আকৃষ্ট করে থাকে।

বিটকয়েনের ক্ষেত্রে অস্থিরতার হার খুব বেশি হতে পারে। এঁর উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে, আমরা কয়েক মাসের মধ্যেই বিটকয়েনের দাম প্রায় $৩০,০০০ থেকে $৬০,০০০-এ তীব্র বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি, তারপরে $৩০,০০০-এ সমানভাবে তীক্ষ্ণ হ্রাস পেয়েছি।

বিটকয়েনকে প্রায়ই অনুমানের জন্যে একটি সম্পদ বা রিসোর্স হিসাবে দেখা হয়ে থাকে। বাজারের মধ্যে নতুন বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের আকৃষ্ট করা নাটকীয়ভাবে চাহিদা বাড়াতে পারে এবং সেই অনুযায়ী দামও বাড়াতে পারবে। কিন্তু যতো তাড়াতাড়ি কিছু উত্তেজনা দেখা দিয়ে থাকে, ততো তাড়াতাড়িই তা নিয়ন্ত্রক সংবাদ, সাইবার আক্রমণ বা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন, বিনিয়োগকারীরা বা ইনভেস্টটেটররা বিক্রি শুরু করতে পারে, যার ফলে দাম কমে যায়।

এছাড়াও, বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি আইন গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের দ্বারা বড়ো ও বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করার বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনার মতো বৈশ্বিক ঘটনাগুলিও দামের তীব্র ওঠানামা ঘটাতে পারে।

শুধুমাত্র কয়েকটি সরঞ্জামাদির টুলগুলো এবং সূচকের ইন্ড্রিকেটটর রয়েছে যাকিনা আপনাকে অস্থিরতা ট্র্যাক করতে দিয়ে থাকে:

ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতার কারণগুলো বা ফ্যাক্টরগুলো।

১. নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকা। বেশিরভাগেরই দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনোও স্পষ্টভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়, যাকিনা অনিশ্চয়তা তৈরি করে থাকে এবং অনুমানকে উৎসাহিত করে থাকে। নিয়ন্ত্রণের এই অভাব বাজারের কারসাজি এবং বন্য মূল্যের বা দামের ওঠানামার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

২. সামান্য তারল্যতা থাকা। ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও, কিছু ক্ষেত্রে তারল্যতা কম থাকে, বিশেষ করে কম পরিচিত কয়েনের ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে। ছোটো ট্রেডিং ভলিউম বড়ো লেনদেনের পটভূমিতে তীক্ষ্ণ দামের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

৩. তথ্যগুলো, খবরাখবর এবং গুজবগুলো। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারটি খবরাখবর এবং গুজবে দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ফিডব্যাকগুলো দেখায়। নিয়ন্ত্রণ, হ্যাকিং বা নতুন অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পার্টনারশিপ ঘোষণাগুলো বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ফিডব্যাকগুলো সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে দামের বড়ো ও বৃহৎ ওঠানামা হতে পারে।

৪. বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের মনোবিজ্ঞান বা সাইকোলজি। মূল্যের বা দামের ওঠানামার ক্ষেত্রে আবেগগত উপলব্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভয় এবং লোভে বিনিয়োগকারীরা বা ইনভেস্টটেটরকারীরা সাবঅপ্টিমাল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যাকিনা বন্য অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করে থাকে।

৫. প্রযুক্তিগত টেকনিক্যাল কারণগুলো। প্রযুক্তিগত টেকনিক্যাল আপডেট যেমন ফর্ক (ব্লকচেন অ্যালগরিদম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, সেইসাথে একটি বিদ্যমান প্রকল্পের কোডের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করার উপায়) বা প্রোটোকলের পরিবর্তনগুলিও হারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতার পরিণতি

উচ্চ অস্থিরতা লাভের বা মুনাফার প্রফিট করার সুযোগটা সৃষ্টি করে থাকে, এবং সাথে কিন্তু ঝুঁকিও বাড়ায়। বিনিয়োগকারীরা বা ইনভেস্টটেটরকারীরা হয় উল্লেখযোগ্যভাবে লাভ বা মুনাফার প্রফিট করতে পারে বা অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁদের বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট হারাতে পারে। অতএব, একটি স্পষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলো এড়াতে ব্যবস্থাপনার কৌশলগত সূত্র বা স্ট্যাডেজি থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও, দামের তীব্র ওঠানামা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে বিনিময়ের এক্সচেঞ্জ করতে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা কঠিনতম করে তুলতে পারে। বিক্রয়ের সময় এবং রূপান্তরের মাধ্যমে কনর্ভাট করার সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য মূল্য বা দাম হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত ক্ষতির ঝুঁকির কারণে ব্যবসাগুলি ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করা এড়াতে পারে।

এটা বিবেচনা করার মতো যে, অস্থিরতা ক্রিপ্টোকারেন্সি ডেরিভেটিভস-এর মতো নতুন আর্থিক বা ফাইন্যান্সিয়াল উপকরণগুলির বিকাশকে উৎসাহিত করে থাকে, যেটি বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলোকে হেজ করতে সাহায্য করতে পারে (সুদের হার, মুদ্রা বা কয়েন এবং মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলোর থেকে নির্দিষ্ট আর্থিক বা ফাইন্যান্সিয়াল অবস্থান রক্ষা করতে) বা মূল্যের বা দামের ওঠানামা থেকে লাভের বা মুনাফার প্রফিট পেতে।

এছাড়াও, উচ্চ অস্থিরতার সময়ে, টেকসই সমাধান দিতে পারে এমন প্রকল্পগুলি অনুকূলভাবে দেখা যেতে পারে। এটি প্রযুক্তির টেকনোলজির উপর ফোকাস করতে পারে যেটি স্থিতিশীলতা এবং পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে।

সুতরাং, ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতা এমন একটি ঘটনা যার অনেক কারণগুলো এবং ফলাফলগুলো রয়েছে যাকিনা বাজার এবং এর অংশগ্রহণকারীদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে সফলভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্যে, এই অস্থিরতার জন্যে প্রস্তুত থাকা, এঁদের উৎসগুলিকে বোঝা এবং আপনার জ্ঞান ব্যবহার করে এমন একটি কৌশলগত সূত্র বা স্ট্যাডেজি তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যাকিনা ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলো হ্রাস করতে এবং এই গতিশীল বাজারের উপস্থাপিত সুযোগগুলিকে পুঁজি করতে সহায়তা করবে।

কেনো ক্রিপ্টোকারেন্সির অস্থিরতা ট্র্যাক করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

ক্রিপ্টোকারেন্সির অস্থিরতা নিরীক্ষণ করা একটি মূল অভ্যাস যেটি প্রত্যেক বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টটেটরকারী যারা কার্যকরীভাবে তাঁদের সম্পদের রির্সোসগুলো পরিচালনা করতে চায় তাঁদের বিবেচনা করা উচিত।

যদিও উচ্চ অস্থিরতা কিছু বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের জন্যে ভীতিকর হতে পারে, কিন্তু অন্যদের জন্যে এটি লাভের বা মুনাফার প্রফিট করার সুযোগটিকে উপস্থাপন করে থাকে। ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিগত টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ্যানালাইজ করতে কৌশলগত সূত্র বা স্ট্যাডেজি এবং ট্রেডিং কৌশলগত সূত্রগুলো বা স্ট্যাডেজিগুলো ব্যবহার করে পার্থক্য থেকে লাভের বা মুনাফার প্রফিট করার জন্যে স্বল্পমেয়াদী মূল্যের বা দামের ওঠানামা ব্যবহার করতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারটি আতঙ্ক এবং লোভ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। বর্তমান অস্থিরতার সম্পর্কে সচেতন হওয়া বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের মানসিক সিদ্ধান্ত এড়াতে এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করতে পারবে।

ট্র্যাকিং অস্থিরতা আপনাকে বাজারে সাধারণ প্রবণতার মধ্যে ট্রেন্ডগুলোকে সনাক্ত করতে দিয়ে থাকে। বিনিয়োগকারীরা বা ইনভেস্টটেটরকারীরা সম্ভাব্য বাজারের মধ্যে দিকনির্দেশ নির্ধারণের জন্যে মূল্যের বা দামের ওঠানামার ডেটাগুলো ব্যবহার করতে পারে, যার ফলে আরোও সচেতন বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির বিভিন্ন মাত্রার অস্থিরতা থাকে। এই সূচকের মূল্যায়ন বিনিয়োগকারীদের বা ইনভেস্টটেটরকারীদের তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলোর প্রোফাইল এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করার উদ্দেশ্যগুলির উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত সম্পদের রির্সোসগুলো নির্বাচন করতে সাহায্য করে থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতা বাজারের মধ্যে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি সূচকের ইন্ড্রিকেটটর হিসাবেও কাজ করতে পারে। এঁর উদাহরণস্বরূপ, উচ্চতর মাত্রার অস্থিরতা অনিশ্চয়তা বা সরবরাহ ও চাহিদার পরিবর্তন নির্দেশ করতে পারে।

উপসংহারে, এটি অবশ্যই বলা উচিত যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থিরতা ট্র্যাক করা যে কেউ এই বিভাগে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করতে চায় তাঁর জন্যে একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। মূল্যের বা দামের ওঠানামার সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিপূর্ণ রিক্সগুলোকে এবং সুযোগগুলিকে বোঝা আপনাকে আরোও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে এবং আপনার আর্থিক বা ফাইন্যান্সিয়াল লক্ষ্যগুলোকে বা টার্গেটগুলোকে অর্জনে সহায়তা করবে। অতএব, বাজারের মধ্যে ক্রমাগতভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ্যানালাইজ করা মূল্যবান বিষয় - এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনাগুলোকে বাড়িয়ে তুলবে!